ড্রাগন ফলের গাছ লাগানো থেকে শুরু করে ফুল ফল অবদি

ড্রাগন গাছ লাগানো থেকে শুরু করে ফুল ও ফল আসা পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা দেখুন।

বর্তমানে একটি পুষ্টিকর ফল হিসেবে বাজারে উঠে এসেছে ড্রাগন ফল। এই ফলের সম্পর্কে আমরা এখন কমবেশি অনেকেই পরিচিত। অনেকেই বাড়ির ছাদে এই ফল গাছের চারা রোপন করে ফল লাভ করছি। আবার অনেকে বাজার থেকে এই ফল কিনে এনে খাচ্ছেন। তবে বাজারে ফল এবং নিজের হাতে বসানো গাছের ফলের মধ্যে একটা তফাৎ আছে।

বাজারে থাকা ফলগুলি আকারে বড় হলেও তার মিষ্টত্ব অনেকটা কম হয়ে থাকে। এর কারণ অবশ্য হতে পারে তার জাতের বৈশিষ্ট্য। কারণ ড্রাগন ফলের অনেক রকমের জাত আছে এবং সব জাতের ফল একই রকম স্বাদের নয়। যেমন ধরুন যে সাদা শ্বাসের ফলটি আছে সেটি খেতে অনেকটা সুস্বাদু নয়। অন্যদিকে যে লাল ফল অথবা পিংক কালারের ফলটি আছে সেটি অনেক বেশি মিষ্টি ও সুস্বাদু।

আমাদের দেশে ড্রাগন ফল একটি নতুন ফল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। এই ফলের নানান উপকারীর গুন আছে যেগুলি এখানে আলোচনা আর করছি না। তবে মনে রাখবেন বর্তমানে অনেক ডাক্তাররাই এই ফলটি তাদের প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করছেন। কারণ এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নানান জটিল রোগ দূরে রাখতে সাহায্য করে। আজ আমরা এখানে এই ড্রাগন ফলের গাছ সম্পর্কে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করব।

ড্রাগন ফলের গাছ কিভাবে লাগাবো

ড্রাগন ফলের গাছ লাগাবেন কেমন করে দেখুন

আপনি যদি বাড়িতে কিনবা মাঠে ড্রাগন ফলের গাছ লাগাতে চান তাহলে আপনাকে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ড্রাগন ফলের গাছ তার বীজ থেকে চারা হিসেবে প্রস্তুত করা যায় অথবা তার ডাল কেটে বসালেও তা থেকে গাছ তৈরি করা যায়। তবে বীজ থেকে হওয়া চারা গাছটিতে ফল আসতে প্রায় ৩ বছরের অধিক সময় লেগে যায়। এই সময়ের মধ্যে গাছটিকে টিকিয়ে রাখাও অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। তাই যারা ড্রাগন গাছ লাগাতে চান তারা অবশ্যই ড্রাগনের গাছের ডাল কেটে লাগান। এতে তাড়াতাড়ি গাছ বেড়ে উঠবে এবং দেড় বছরের মধ্যেই ফল দিতে পারবে।

আপনি যদি ড্রাগন গাছের ডাল বসাতে চান তাহলে একটি জিনিস সবসময় মনে রাখবেন; ফল ধরা গাছ অর্থাৎ মাদার গাছেরই ডাল লাগাবেন। কারণ মাদার গাছে ফল হচ্ছে এটা আপনি নিশ্চিত জানেন। তাই এর ডাল লাগালে ফল যেমন তাড়াতাড়ি আসবে তেমনি ফুল থেকে ফলটাও টিকবে।

গাছ থেকে ডালটি কাটার পর এক থেকে দু দিন খোলা আকাশের নিচে রেখে দিন। তাতে গাছের ডালের লেগে থাকা রসটি কমে আসবে। এরপর ডালের গোড়ার দিকটা একটু ছুলে কান্ডটি বের করুন। একটি ছত্রাকনাশক নিয়ে দুই দিকে লাগিয়ে আপনি মাটিতে বসাবেন তাতে গাছটি টিকবে বেশি। যদি ছত্রাক নাশক না থাকে তাহলে অ্যালোভেরার পাতা লাগিয়ে দেবেন।

মনে রাখবেন প্রথম যখন গাছ লাগাবেন কোন উচ্চ সার যুক্ত মাটিতে লাগাবেন না; তাতে গাছটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ১৫ দিনের মধ্যে ড্রাগন গাছের শেকর বের হয় এবং ৩০ দিনের মধ্যে তাতে গজি বা পাতা আসতে শুরু করে। এরপর আপনি চাইলে সেটি একটি ভালো বড় জায়গা লাগাতে পারেন।

ড্রাগন গাছে ফুল আসতে কত সময় লাগে

ড্রাগন গাছের ফুল কেমন দেখতে দেখুন
যদি আপনি ভালো জাতের ড্রাগনের কাটিং লাগান তাহলে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে আপনার গাছে ফুল ও ফল আসবে। তবে এখানেও কয়েকটা নিয়ম আছে।

  1. ড্রাগনের চারাটিতে একটি কিংবা দুটি লম্বা কান্ড রাখবেন যা উপর দিকে উঠে যাবে।
  2. উপরে উঠে যাওয়ার পর প্রথম বস্তুর দুই থেকে তিনটি কান্ড রাখবেন।
  3. ড্রাগন গাছে মার্চ মাস থেকে প্রায় নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফল লক্ষ্য করা যায়।
  4. কাণ্ড গুলি বাড়তেই থাকে তাই কান্ড গুলিকে সঠিক সময়ে ট্রিপিং করে দেবেন বা দগা কেটে দেবেন।
  5. ডগা কাটার ফলে সমস্ত খাবার ওই ডগার গোড়ায় গিয়ে চলতে থাকে এবং ১৫ দিনের মধ্যে এই ড্রাগেনে ফুল আসে।

মনে রাখবেন এই সময়ের ড্রাগন গাছের নাইট্রোজেন যুক্ত খাবার দিলে চলবে না পটাশ এবং ফসফরাস জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

ড্রাগন গাছের ফুল থেকে ফল হতে কত সময় লাগে

সাদা ড্রাগন ফল দেখুন
ড্রাগন গাছে ফুল আসার পর সবথেকে বেশি যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল ফুলগুলিকে টিকিয়ে রাখা। এই সময় ফুল আসার পর আপনাকে বোরন ও জিং যুক্ত সার স্প্রে করতে হবে। কারণ এই বোরন এবং জিং ফুল টেকাতে ও ফলে রূপায়িত করতে সাহায্য করে। মনে রাখবেন এই দুই সার গরমকালে মাসে একবার এবং বর্ষাকালে মাসে দুবার স্প্রে করতে পারবেন।

কুড়ি আসার পর থেকে ফলে রূপান্তরিত হতে সময় লাগে প্রায় ৫০ দিন। এর মধ্যে কুড়ি থেকে ফুল ফোটা অবদি সময় নেয় ১৫ দিন এবং ফুল ফোটার পর থেকে ফল পাকা পর্যন্ত সময় নেয় ৩৫ দিন।

তবে ড্রাগন গাছে ফুল আসা মানেই যে সব ফুল থেকে ফল আসবে তা কিন্তু নয়। গাছ নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী ফুলগুলিকে টিকিয়ে রাখে। আবার এমন কিছু ফুল আছে যেগুলি নিজেরা পরাগায়িত হতে পারে না তাই সেগুলি ঝরে পড়ে যায় বা ফল সেট হয় না।


তবে কিছু বিষয় ফল পাকার সময়কে প্রভাবিত করতে পারে:

  • জাত: বিভিন্ন জাতের ড্রাগন ফলের পাকার সময় কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
  •  আবহাওয়া: তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং সূর্যের আলোর পরিমাণ ফল পাকার গতি প্রভাবিত করে।
  •  মাটি ও সার: মাটির গুনাগুন এবং সারের ব্যবহার ফলের পাকাকে প্রভাবিত করে।

Next Post Previous Post