লাউ চাষ করার সম্পূর্ণ পদ্ধতি | Cultivation of Gourds

লাউ চাষের সম্পূর্ণ গাইডলাইন: মাটি প্রস্তুতি, বীজ বপন, সার প্রয়োগ, সেচ, রোগ ও পোকা দমন সহ বারোমাসি ও হাইব্রিড লাউ চাষ এবং টবে লাউ চাষের পদ্ধতি নিয়ে..

লাউ চাষ একটি লাভজনক কৃষিকাজ যা সারা বছর ধরে করা যায়। লাউ একটি জনপ্রিয় সবজি যা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এই প্রবন্ধে আমরা লাউ চাষের সম্পূর্ণ গাইডলাইন নিয়ে আলোচনা করবো, যার মধ্যে রয়েছে মাটি প্রস্তুতি, বীজ বপন, সার প্রয়োগ, সেচ, রোগ ও পোকা দমন, বারোমাসি ও হাইব্রিড লাউ চাষের পদ্ধতি, টবে লাউ চাষ, এবং শীতকালীন লাউ চাষ। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে লাউ চাষ করলে আপনি ভালো ফলন পেতে পারেন এবং অর্থনৈতিকভাবে সফল হতে পারেন।

লাউ চাষ পদ্ধতি সম্পূর্ণ গাইডলাইন

লাউ চাষ করার পদ্ধতি

১. মাটি প্রস্তুতি: লাউ চাষের জন্য দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। মাটি ভালোভাবে চাষ করে ২-৩ বার চাষ দিতে হবে। চাষ করার সময় মাটির গভীরতা প্রায় ১৫-২০ সেন্টিমিটার রাখা উচিত। মাটিতে ১০-১৫ টন পচা গোবর সার মিশিয়ে দিতে হবে।

২. বীজ বপন: লাউ বীজ বপনের জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস উপযুক্ত সময়। প্রতি গর্তে ২-৩ টি বীজ বপন করতে হবে। গর্তের গভীরতা ২-৩ সেন্টিমিটার এবং গর্তের দূরত্ব ১ মিটার করে রাখতে হবে। বীজ বপনের পর মাটি দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে।

৩. সার প্রয়োগ: লাউ চাষে সারের প্রয়োজনীয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক অবস্থায় গোবর সার ব্যবহারের পাশাপাশি রাসায়নিক সারও প্রয়োজন হতে পারে। ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১ কেজি টিএসপি এবং ৫০০ গ্রাম এমওপি সার প্রতি শতাংশ জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

৪. জল সেচ: লাউ চাষে নিয়মিত সেচ দেওয়া প্রয়োজন। মাটির অবস্থা অনুযায়ী ৭-১০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। তবে অতিরিক্ত সেচ দিলে মাটির ক্ষতি হতে পারে, তাই সেচের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

৫. রোগ ও পোকা দমন: লাউ গাছের বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ হতে পারে। এর মধ্যে পাউডারি মিলডিউ, ডাউনি মিলডিউ, এবং লাউ বিটল উল্লেখযোগ্য। এই রোগ ও পোকা দমনের জন্য নিয়মিত কীটনাশক ও ফাঙ্গিসাইড প্রয়োগ করতে হবে।


হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি

  1. হাইব্রিড লাউ চাষের জন্য উন্নতমানের হাইব্রিড বীজ নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড বীজ পাওয়া যায় যা ভালো ফলন দেয়।
  2. হাইব্রিড লাউ চাষের জন্য দোআঁশ মাটি উত্তম। মাটি চাষ করে এবং ১৫-২০ সেন্টিমিটার গভীর চাষ দিতে হবে। ১৫-২০ টন গোবর সার এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে।
  3. হাইব্রিড লাউ বীজ বপনের জন্য ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস উপযুক্ত। প্রতি গর্তে ২-৩ টি বীজ বপন করতে হবে এবং গর্তের দূরত্ব ১ মিটার রাখতে হবে।
  4. হাইব্রিড লাউ চাষে ইউরিয়া, টিএসপি, এবং এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি শতাংশ জমিতে ৭০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১ কেজি টিএসপি, এবং ৭০০ গ্রাম এমওপি প্রয়োগ করতে হবে।
  5. হাইব্রিড লাউ চাষে নিয়মিত সেচ দেওয়া প্রয়োজন। ৫-৭ দিন পর পর সেচ দিতে হবে এবং ফুল ফোটার সময় বেশি সেচ দিতে হবে।
  6. হাইব্রিড লাউ চাষে রোগ ও পোকা দমনের জন্য উন্নতমানের কীটনাশক ও ফাঙ্গিসাইড প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত পরিদর্শন করা উচিত।


বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি

  • বারোমাসি লাউ চাষের জন্য উন্নতমানের বারোমাসি বীজ ব্যবহার করতে হবে।
  • মাটি চাষ করে এবং ১৫-২০ সেন্টিমিটার গভীর চাষ দিতে হবে। ১৫-২০ টন গোবর সার এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • বছরের যেকোনো সময় বীজ বপন করা যায়। প্রতি গর্তে ২-৩ টি বীজ বপন করতে হবে এবং গর্তের দূরত্ব ১ মিটার রাখতে হবে।
  • বারোমাসি লাউ চাষে সার প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরিয়া, টিএসপি, এবং এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • বারোমাসি লাউ চাষে নিয়মিত সেচ দেওয়া প্রয়োজন। ৭-১০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।
  • বারোমাসি লাউ চাষে রোগ ও পোকা দমনের জন্য নিয়মিত কীটনাশক ও ফাঙ্গিসাইড প্রয়োগ করতে হবে।


টবে লাউ চাষ পদ্ধতি

  1. টবে লাউ চাষের জন্য বড় টব নির্বাচন করতে হবে। টবের আকার কমপক্ষে ২০ লিটার হতে হবে।
  2. টবের মাটি প্রস্তুত করতে দোআঁশ মাটি, গোবর সার, এবং রাসায়নিক সার মিশিয়ে দিতে হবে।
  3. টবে ২-৩ টি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের পর মাটি দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে।
  4. টবে লাউ চাষে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি ১৫-২০ দিন পর পর টবের মাটিতে ইউরিয়া, টিএসপি, এবং এমওপি সার মিশিয়ে দিতে হবে।
  5. টবে লাউ চাষে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। মাটির আর্দ্রতা ঠিক রাখতে প্রতি ২-৩ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।

টবে লাউ চাষে রোগ ও পোকা দমনের জন্য নিয়মিত কীটনাশক ও ফাঙ্গিসাইড প্রয়োগ করতে হবে। 


শীতকালীন লাউ চাষ পদ্ধতি

  • শীতকালীন লাউ চাষের জন্য শীত সহনশীল বীজ নির্বাচন করা উচিত। 
  • মাটি চাষ করে এবং ১৫-২০ সেন্টিমিটার গভীর চাষ দিতে হবে। ১৫-২০ টন গোবর সার এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • শীতকালীন লাউ বীজ বপনের জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস উপযুক্ত। প্রতি গর্তে ২-৩ টি বীজ বপন করতে হবে এবং গর্তের দূরত্ব ১ মিটার রাখতে হবে।
  • শীতকালীন লাউ চাষে ইউরিয়া, টিএসপি, এবং এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • শীতকালীন লাউ চাষে নিয়মিত সেচ দেওয়া প্রয়োজন। মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখতে ৭-১০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।
  • শীতকালীন লাউ চাষে রোগ ও পোকা দমনের জন্য নিয়মিত কীটনাশক ও ফাঙ্গিসাইড প্রয়োগ করতে হবে।

লাউ চাষে নিয়মিত যত্ন এবং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করলে আপনি লাউ চাষে সফলতা অর্জন করতে পারবেন।


লাউ চাষের উপযুক্ত সময়

লাউ চাষের জন্য প্রধানত দুটি মৌসুম উপযুক্ত:

  1. ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ
  2. জুন থেকে জুলাই

এই সময়গুলোতে লাউ চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে বারোমাসি লাউ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে সারা বছরই লাউ চাষ করা যায়।

Next Post Previous Post