মৌলিক সংখ্যা, পরস্পর মৌলিক সংখ্যা ও যমজ মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে? | ১ থেকে ১০০ মৌলিক সংখ্যার উদাহরণ

মৌলিক সংখ্যা, পরস্পর মৌলিক সংখ্যা ও যমজ মৌলিক সংখ্যা

মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে?

মৌলিক সংখ্যা (Prime Number) হল এমন একটি স্বাভাবিক সংখ্যা (natural number) যা কেবলমাত্র দুটি ধনাত্মক গুণনীয়ক (positive divisors) দ্বারা বিভাজ্য হয়— ১ এবং সেই সংখ্যা নিজেই। অর্থাৎ মৌলিক সংখ্যার গুণনীয়ক কেবল ১ এবং ওই সংখ্যা নিজেই হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ— ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩ ইত্যাদি মৌলিক সংখ্যা। ২ হল ক্ষুদ্রতম এবং একমাত্র জোড় মৌলিক সংখ্যা। দুই অঙ্কের বৃহত্তম মৌলিক সংখ্যা ৯৭।

১ থেকে ১০০ পর্যন্ত মৌলিক সংখ্যা (২৫টি)

মৌলিক সংখ্যা ১-১০০
১১
১৩
১৭
১৯
২৩
২৯
৩১
৩৭
৪১
৪৩
৪৭
৫৩
৫৯
৬১
৬৭
৭১
৭৩
৭৯
৮৩
৮৯
৯৭

পরস্পর মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে?

পরস্পর মৌলিক সংখ্যা (Coprime Numbers বা Relatively Prime Numbers) হল এমন দুটি সংখ্যা যা একে অপরকে বিভাজ্য করতে পারে না। অর্থাৎ তাদের গুণফলের সর্বোচ্চ সাধারণ গুণনীয়ক (HCF) বা গুণফলের সর্বোচ্চ সাধারণ গুণক (GCD) হল ১।

পরস্পর মৌলিক সংখ্যা উদাহরণ

৭ এবং ২০: ৭ এবং ২০ পরস্পর মৌলিক সংখ্যা কারণ তাদের HCF বা GCD ১। ৭ কে ২০ দ্বারা ভাগ করা যায় না এবং ২০ কে ৭ দ্বারা ভাগ করা যায় না।

১৫ এবং ২৪: ১৫ এবং ২৪ পরস্পর মৌলিক সংখ্যা কারণ তাদের HCF বা GCD ১। ১৫ এবং ২৪ একে অপরের গুণফলে কোনো সাধারণ গুণক নেই যা ১-এর বাইরে।

দুটি পরস্পর মৌলিক সংখ্যার গ.সা.গু কত?

দুটি পরস্পর মৌলিক সংখ্যার গুণফলের সর্বোচ্চ সাধারণ গুণক (HCF) বা গরিষ্ঠ সাধারণ গুনিতক (GCD) সর্বদা । 

কারণ যে দুটি পরস্পর মৌলিক সংখ্যা একে অপরকে বিভাজ্য করতে পারে না এবং তাদের মধ্যে কোন সাধারণ গুণক নেই যা ১-এর বাইরে। উদাহরণস্বরূপ— সংখ্যা ৫ এবং ১২ পরস্পর মৌলিক কারণ তাদের HCF বা GCD ১।

দুটি পরস্পর মৌলিক সংখ্যার ল.সা.গু কত?

দুটি পরস্পর মৌলিক সংখ্যার ল.সা.গু (লঘিষ্ঠ সাধারণ গুনিতক) হল তাদের গুণফল।

যদি a এবং b দুটি পরস্পর মৌলিক সংখ্যা হয়, তবে তাদের ল.সা.গু (LCM) হবে:

LCM(a, b) = a × b

এটি সত্য কারণ পরস্পর মৌলিক সংখ্যার গুণফলের গুণক সর্বদা ১ হয়, ফলে তাদের ল.সা.গু তাদের গুণফলেই সমান। উদাহরণস্বরূপ, সংখ্যা ৫ এবং ১২ পরস্পর মৌলিক, তাদের ল.সা.গু হবে:

LCM(5, 12) = 5 × 12 = 60

যমজ মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে?

যমজ মৌলিক সংখ্যা (Twin Prime Numbers) এমন দুটি মৌলিক সংখ্যা যা একে অপর থেকে ২ সংখ্যার ব্যবধানে থাকে। অর্থাৎ, যদি ( p ) এবং ( p + 2 ) উভয়ই মৌলিক সংখ্যা হয়। তবে তারা যমজ মৌলিক সংখ্যা বলে মনে হয়। ৭ ও ১১ কি যমজ মৌলিক সংখ্যা নয়।

যমজ মৌলিক সংখ্যা উদাহরণ

(১১, ১৩): ১১ এবং ১৩ উভয়ই মৌলিক সংখ্যা এবং তাদের মধ্যে ব্যবধান ২, তাই তারা যমজ মৌলিক সংখ্যা।

(১৭, ১৯): ১৭ এবং ১৯ উভয়ই মৌলিক সংখ্যা এবং তাদের মধ্যে ব্যবধান ২, তাই তারা যমজ মৌলিক সংখ্যা।

(২৯, ৩১): ২৯ এবং ৩১ উভয়ই মৌলিক সংখ্যা এবং তাদের মধ্যে ব্যবধান ২, তাই তারা যমজ মৌলিক সংখ্যা।

মৌলিক সংখ্যার প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • মৌলিক সংখ্যা (একক) এমন সংখ্যা যা কেবল ১ এবং সেই সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ ৭ একটি মৌলিক সংখ্যা কারণ এটি কেবল ১ এবং ৭ দ্বারা ভাগ করা যায়।
  • ২ হল সর্বনিম্ন এবং একমাত্র জোড় মৌলিক সংখ্যা। অন্য কোন জোড় সংখ্যা ২ ছাড়া মৌলিক হতে পারে না কারণ তারা ২ দ্বারা ভাগ করা যায় ফলে তারা গঠনমূলক সংখ্যা।
  • ২ এর পরের সব মৌলিক সংখ্যা অজোড়। যেহেতু, যে কোনো জোড় সংখ্যা ২ দ্বারা বিভাজ্য হয়, তাই তা মৌলিক হতে পারে না।
  • মৌলিক সংখ্যা গুলোর সংখ্যা অসীম। প্রাচীন গ্রীক গণিতজ্ঞ ইউক্লিড প্রায় ৩০০ খ্রিষ্টপূর্বে এই তত্ত্ব প্রমাণ করেছিলেন।

এই তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রতি ধনাত্মক সংখ্যা ১ থেকে বড় সংখ্যা মৌলিক হতে পারে বা মৌলিক সংখ্যার গুণফল হতে পারে, যা একেবারে অনন্য।

মৌলিক সংখ্যার গুরুত্ব

  • মৌলিক সংখ্যা গুলি মৌলিক সংখ্যা গঠনের "ভিত্তি" হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এগুলি সমস্ত পূর্ণসংখ্যার মৌলিক গঠন।
  • আধুনিক সময়ে, মৌলিক সংখ্যা ক্রিপ্টোগ্রাফিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে পাবলিক-কী ক্রিপ্টো সিস্টেমগুলিতে যেমন RSA, যেখানে বড় মৌলিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয় ডিজিটাল যোগাযোগ সুরক্ষিত করতে।
  • মৌলিক সংখ্যা গাণিতিক গবেষণার বিভিন্ন ক্ষেত্রের কেন্দ্রীয় অংশ। প্রাইম সংখ্যা বিতরণ, গোল্ডবাচ কনজেকচার, এবং রাইম্যান হাইপোথিসিসের মতো সমস্যাগুলি মৌলিক সংখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত।

মৌলিক সংখ্যা গাণিতিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন ক্রিপ্টোগ্রাফি, সংখ্যা তত্ত্ব, এবং আরও অনেক কিছু। তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলি গবেষণার একটি প্রধান ক্ষেত্র তৈরি করে।

Next Post Previous Post